Dhaka , Thursday, 28 August 2025
News Title :
অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হাজার হাজার যুবক : ঝুঁকছে ভয়ংকর অপরাধে বনবিভাগের সামনেই পাচার হচ্ছে সুন্দরবনের মূল্যবান কাঠ সাতক্ষীরায় চিংড়ীতে জেলী পুশ : ব্যবসায়ীকে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা যুবদল নেতা শামীম হত্যার দায়স্বীকার করল স্ত্রী ও শ্যালক সাতক্ষীরায় ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা অবজার্ভারে সংবাদ প্রকাশে কালিগঞ্জে অভিযানে ১৬ কেজি পুশকৃত বাগদা চিংড়ি জব্দ সাতক্ষীরায় মেরুদণ্ডের জটিল অপারেশন সম্পন্ন কালিগঞ্জে দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতায় বিতর্ক, রচনা ও চিত্রাঙ্কন অনুষ্ঠিত যানজটের শহরে পরিণত সাতক্ষীরা শহর : নাকাল জনসাধারণ সুন্দরবনের চর দখল করে রির্সোট : গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হাজার হাজার যুবক : ঝুঁকছে ভয়ংকর অপরাধে

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন:
অনলাইন জুয়ায় প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার যুবক।এক ক্লিকে উড়ে যাচ্ছে হাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা। এ যেন এক পৌরাণিক কাহিনীর মত। অনলাইন জুয়াগুলো সমাজে এখন গ্রাস করেছে। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে কলেজ ছাত্র থেকে মধ্য ব্যবসায়ী পর্যন্ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন তারকাদেরকে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে।
এতে করে সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা অনেকেই অনলাইনে জুয়া খেলতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

ফুটপাতের চা দোকানি থেকে শুরু করে সেলুন দোকানদার, হকার, বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী, বিক্রয়কর্মী থেকে শুরু করে ভবঘুরে, বাস-ট্রাকের চালক-হেলপার, সিএনজিচালক, নির্মাণশ্রমিক, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক ও দিনমজুর শ্রেণির মতো একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষ এখন দিনের একটা সময় অনলাইনে বাজি ধরতেই ব্যস্ত থাকে।

এদের কেউ কেউ জুয়া খেলে অর্থ আয় করলেও অনেকেই আবার নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনলাইন জুয়ার আসরে। প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, ওই শ্রেণী-পেশার মানুষেরা এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাজি ধরে এবং তারপর এক পর্যায়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।

সরকার গত কয়েক বছরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি জুয়ার সাইট বন্ধ করেছে। সিআইডি, ডিবি ও র‍্যাবের হাতে ধরা পড়েছে জুয়ার সাইট পরিচালনাকারী শতাধিক ব্যক্তি। তবে প্রতিটি সাইট বন্ধ করার পরপর এই চক্র ভিপিএন দিয়ে সাইটগুলো আবার সচল করে।

এদিকে, বিজ্ঞাপন প্রচারসহ অনলাইনে জুয়া বা বেটিংয়ের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন চিহ্নিত করা, এগুলোর কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয়, তা নির্ণয় এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালতের এই নির্দেশের পর গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুকে লিখেছেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনটি পাশ হবে বলে আশা করি। এই আইনে সাইবার স্পেসে জুয়া কিংবা অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

সাতক্ষীরার গ্রাম থেকে শহর চায়ের দোকান থেকে শপিং মল সবজায়গায় পৌঁছে গেছে জুয়ার বিস্তার।
প্রতিদিন জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছে তরুণ যুবকরা।
অনেকসময় জুয়ার টাকা জোগাড় না করতে পের উঠতি বয়সী তরুণরা চুরি- ছিনতাইে ঝুঁকছে। জোটবদ্ধ হয়ে কিশোর গাং তৈরি করে রাতে চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে,
জুয়ার সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে সাতক্ষীরা শহরের একাংশ কালিগঞ্জ, শ্যামনগরে। এসব এলাকায় জুয়ার প্রভাবে কিশোর গাং সদস্য রা প্রতিনিয়ত ছিনতাই ডাকাতি করছে।
শহরের পলাশপোল,কাটিয়া পুরাতন সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর, বন্দকাটি, নারায়ণপুর, মৌতলা, কৃষ্ণনগর, রতনপুর, নলতা ও শ্যামনগরের কৈখালী,গাবুরা,বুড়িগোয়ালিনী,মুন্সিগঞ্জ জুয়ার প্রভাবে ছিনতাই ডাকাতি বেড়েছে। তাছাড়া দেবহাটার পারুলিয়া, সখিপুর সহ বিভিন্ন এলাকার জুয়ার প্রভাবে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এসব অঞ্জলের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সয়তানের নিশ্বাস ব্যবহার করে সর্বস্ব লুট করছে এই কিশোর গাং গুলো।

চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে সর্বস্ব লুট হওয়া কালিগঞ্জের ভুক্তভোগীরা বলছে, আমরা অনিরাপদ জীবন যাপন করছি। একসময় চিহ্নিত চোর ডাকাতি ছিল। এখন অল্প বয়সী কিশোর তরুণরা কিশোর গাং তৈরি করে চেতনাশক স্প্রে ব্যবহার করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। মাদক ও জুয়ার টাকার জন্য তারা এই পথ বেছে নিয়েছে।

আরেকভুক্তভোগী বলেন, মোবাইলে জুয়া খেলে টাকা ইনকামের নেশায় অল্প বয়সী কিশোর তরুণরা নিঃস্ব হচ্ছে। আর এসব টাকা জোগাড় করতে গিয়ে চুরি ডাকাতি করছে। আমরা নিরাপদ নয়। আমরা নিরাপত্তা চায়।

অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হওয়া কয়েকজন যুবক বলেন, নোশায় পড়ে লক্ষ টাকা হেরেছি। এখন দেনার দায়ে এলাকা ছেড়েছি। মানুষের থেকে ধার করে জুয়া খেলেছি। মানুষ এখন টাকা চাচ্ছে না দিতে পেরে পালিয়ে শহরে এসেছি। আমরা এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব। সামনে ধোয়াসা দেখছি।

সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির নেতা অধ্যাপক ইদ্রি আলী বলেন, অনলাইন জুয়া অল্প বয়সী তরুণরদের ভাইরাসের মত আক্রমণ করেছে। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে এই সমাজ ও আগামীর প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। অনলাইন জুয়ার কারণে চুরি ডাকাতি ছিনতাই বেড়েছে। মানুষ নিরাপদে থাকতে পারছে না।চেতনাশক স্প্রে ব্যবহার করে সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Satkhira observer

Popular Post

অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হাজার হাজার যুবক : ঝুঁকছে ভয়ংকর অপরাধে

অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হাজার হাজার যুবক : ঝুঁকছে ভয়ংকর অপরাধে

Update Time : 8 Hours Ago

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন:
অনলাইন জুয়ায় প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার যুবক।এক ক্লিকে উড়ে যাচ্ছে হাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা। এ যেন এক পৌরাণিক কাহিনীর মত। অনলাইন জুয়াগুলো সমাজে এখন গ্রাস করেছে। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে কলেজ ছাত্র থেকে মধ্য ব্যবসায়ী পর্যন্ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন তারকাদেরকে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে।
এতে করে সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা অনেকেই অনলাইনে জুয়া খেলতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

ফুটপাতের চা দোকানি থেকে শুরু করে সেলুন দোকানদার, হকার, বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী, বিক্রয়কর্মী থেকে শুরু করে ভবঘুরে, বাস-ট্রাকের চালক-হেলপার, সিএনজিচালক, নির্মাণশ্রমিক, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক ও দিনমজুর শ্রেণির মতো একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষ এখন দিনের একটা সময় অনলাইনে বাজি ধরতেই ব্যস্ত থাকে।

এদের কেউ কেউ জুয়া খেলে অর্থ আয় করলেও অনেকেই আবার নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনলাইন জুয়ার আসরে। প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, ওই শ্রেণী-পেশার মানুষেরা এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাজি ধরে এবং তারপর এক পর্যায়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।

সরকার গত কয়েক বছরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি জুয়ার সাইট বন্ধ করেছে। সিআইডি, ডিবি ও র‍্যাবের হাতে ধরা পড়েছে জুয়ার সাইট পরিচালনাকারী শতাধিক ব্যক্তি। তবে প্রতিটি সাইট বন্ধ করার পরপর এই চক্র ভিপিএন দিয়ে সাইটগুলো আবার সচল করে।

এদিকে, বিজ্ঞাপন প্রচারসহ অনলাইনে জুয়া বা বেটিংয়ের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন চিহ্নিত করা, এগুলোর কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয়, তা নির্ণয় এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালতের এই নির্দেশের পর গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুকে লিখেছেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনটি পাশ হবে বলে আশা করি। এই আইনে সাইবার স্পেসে জুয়া কিংবা অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

সাতক্ষীরার গ্রাম থেকে শহর চায়ের দোকান থেকে শপিং মল সবজায়গায় পৌঁছে গেছে জুয়ার বিস্তার।
প্রতিদিন জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছে তরুণ যুবকরা।
অনেকসময় জুয়ার টাকা জোগাড় না করতে পের উঠতি বয়সী তরুণরা চুরি- ছিনতাইে ঝুঁকছে। জোটবদ্ধ হয়ে কিশোর গাং তৈরি করে রাতে চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে,
জুয়ার সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে সাতক্ষীরা শহরের একাংশ কালিগঞ্জ, শ্যামনগরে। এসব এলাকায় জুয়ার প্রভাবে কিশোর গাং সদস্য রা প্রতিনিয়ত ছিনতাই ডাকাতি করছে।
শহরের পলাশপোল,কাটিয়া পুরাতন সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর, বন্দকাটি, নারায়ণপুর, মৌতলা, কৃষ্ণনগর, রতনপুর, নলতা ও শ্যামনগরের কৈখালী,গাবুরা,বুড়িগোয়ালিনী,মুন্সিগঞ্জ জুয়ার প্রভাবে ছিনতাই ডাকাতি বেড়েছে। তাছাড়া দেবহাটার পারুলিয়া, সখিপুর সহ বিভিন্ন এলাকার জুয়ার প্রভাবে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এসব অঞ্জলের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সয়তানের নিশ্বাস ব্যবহার করে সর্বস্ব লুট করছে এই কিশোর গাং গুলো।

চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে সর্বস্ব লুট হওয়া কালিগঞ্জের ভুক্তভোগীরা বলছে, আমরা অনিরাপদ জীবন যাপন করছি। একসময় চিহ্নিত চোর ডাকাতি ছিল। এখন অল্প বয়সী কিশোর তরুণরা কিশোর গাং তৈরি করে চেতনাশক স্প্রে ব্যবহার করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। মাদক ও জুয়ার টাকার জন্য তারা এই পথ বেছে নিয়েছে।

আরেকভুক্তভোগী বলেন, মোবাইলে জুয়া খেলে টাকা ইনকামের নেশায় অল্প বয়সী কিশোর তরুণরা নিঃস্ব হচ্ছে। আর এসব টাকা জোগাড় করতে গিয়ে চুরি ডাকাতি করছে। আমরা নিরাপদ নয়। আমরা নিরাপত্তা চায়।

অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হওয়া কয়েকজন যুবক বলেন, নোশায় পড়ে লক্ষ টাকা হেরেছি। এখন দেনার দায়ে এলাকা ছেড়েছি। মানুষের থেকে ধার করে জুয়া খেলেছি। মানুষ এখন টাকা চাচ্ছে না দিতে পেরে পালিয়ে শহরে এসেছি। আমরা এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব। সামনে ধোয়াসা দেখছি।

সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির নেতা অধ্যাপক ইদ্রি আলী বলেন, অনলাইন জুয়া অল্প বয়সী তরুণরদের ভাইরাসের মত আক্রমণ করেছে। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে এই সমাজ ও আগামীর প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। অনলাইন জুয়ার কারণে চুরি ডাকাতি ছিনতাই বেড়েছে। মানুষ নিরাপদে থাকতে পারছে না।চেতনাশক স্প্রে ব্যবহার করে সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।