তালা প্রতিনিধি:
স্বামী শামীম শেখ এর সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারিবারিক বিরোধ ছিলো। এ কারণে প্রায়ই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে স্ত্রী বৃষ্টি তার স্বামীকে খুন করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার ৩ দিন আগে সে তার মামাতো ভাই ওবায়দুল্লাহকে তার বাড়ীতে ডেকে নিয়ে আসে।
ঘটনার আগের দিন ২১ আগষ্ট বৃষ্টি ওবায়দুল্লাহকে জানায়, তার স্বামী শামীম বিভিন্ন সময় তাকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করার কারণে সে শামীমকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। এরপর সে ওবায়দুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করে শামীমকে খুন করতে পারবে কিনা। এতে ওবায়দুল্লাহ সম্মতি জানায়। ২ জনের পরিকল্পনামতে ঘটনার দিন ২২ আগষ্ট রাতের খাবার শেষে শামীম শেখ ও তার স্ত্রী ৩য় তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটে যায়। কিছুক্ষণ পর ওবায়দুল্লাহও ৩য় তলায় যায়।
ওবায়দুল্লাহ ছাদে গিয়ে বৃষ্টির রেখে দেওয়া একটি ছোরা নিয়ে পূণরায় ৩য় তলায় আসে। তখন ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি শামীমকে খুন করার জন্য কিভাবে কোপ দিতে হবে তা ইশারায় ওবায়দুল্লাহকে দেখিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ছোরা দিয়ে ওবায়দুল্লাহ শামীমের ঘাড়ে কোপ মারে। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং মৃত্যুবরণ করে।
তখন ওবায়দুল্লাহ এবং বৃষ্টি ছাদে গিয়ে পরিকল্পনামতো ছোরাটি পাশের জলাশয়ে ফেলে দিয়ে ২য় তলায় এসে শামীমের মায়ের সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে থাকে। পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত ওবায়দুল্লাহ ও বৃষ্টির দেয়া তথ্যমতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি পাশের জলাশয় থেকে উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তারকৃত ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি ও ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার বিজ্ঞ আদালতে শামীম শেখ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে এবং জবানবন্দীতে উপরোক্ত বিষয় প্রকাশ করেছে বলে খুলনা জেলা পুলিশের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তালা থানার ৭নং ইসলামকাঠি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম শামীম (৩৬) উথলী গ্রামের শেখ আব্দুল গফ্ফারের ছেলে।
সে পাশ্ববর্তী খুলনার ডুমুরিয়া থানার বেতাগ্রাম (সৈয়দ ঈসা কলেজের পাশে) বসবাস করতো। গত ২২ আগষ্ট রাত অনুমান ৯.৪৫টা হতে ১১.১০টার মধ্যে যেকোন সময় তার নিজ বাড়ির ৩য় তলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা গলা কেটে হত্যা করে। সংবাদ পেয়ে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহত শামীম এর গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহত শামীমের মাতা রশিদা খাতুন (৬২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে ডুমুরিয়া থানার মামলা নং-১৫, তারিখ-২৪/০৮/২০২৫ খ্রি., ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। মামলা রুজুর পর খুলনা জেলা পুলিশ সুপার টি. এম. মোশাররফ হোসেন এর নিবিড় তত্বাবধানে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত পূর্বক গ্রেপ্তার এবং হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আবির সিদ্দিকী শুভ্র এর নেতৃত্বে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
তদন্ত পরিচালনাকালে ঘটনার পরিপার্শ্বিকতা, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার ৪৮ ঘন্টা এবং মামলা রুজু হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২৫ আগষ্ট পুলিশ ভিকটিম শামীমের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি (২৮) এবং তার মামাতো ভাই মোঃ ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার ওরফে বাদল ওরফে ইমন (১৭ বছর ৮ মাস) কে আটক করে ঘটনার বিষয়ে পৃথক পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে।