Dhaka , Thursday, 28 August 2025
News Title :
অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হাজার হাজার যুবক : ঝুঁকছে ভয়ংকর অপরাধে বনবিভাগের সামনেই পাচার হচ্ছে সুন্দরবনের মূল্যবান কাঠ সাতক্ষীরায় চিংড়ীতে জেলী পুশ : ব্যবসায়ীকে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা যুবদল নেতা শামীম হত্যার দায়স্বীকার করল স্ত্রী ও শ্যালক সাতক্ষীরায় ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা অবজার্ভারে সংবাদ প্রকাশে কালিগঞ্জে অভিযানে ১৬ কেজি পুশকৃত বাগদা চিংড়ি জব্দ সাতক্ষীরায় মেরুদণ্ডের জটিল অপারেশন সম্পন্ন কালিগঞ্জে দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতায় বিতর্ক, রচনা ও চিত্রাঙ্কন অনুষ্ঠিত যানজটের শহরে পরিণত সাতক্ষীরা শহর : নাকাল জনসাধারণ সুন্দরবনের চর দখল করে রির্সোট : গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

সুদ না দিতে পারায় ঘরে তালা: বারান্দায় রাত্রিযাপন রিকশাওয়ালার পরিবার

নোয়াখালী হাতিয়ায় সুদের টাকার জন্য রিকশাচালক একরামের বসতঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে তোফায়েল আহম্মেদ নামে একজন। এতে আট দিন ধরে খোলা বারান্দায় সন্তানদের নিয়ে ঝড়বৃষ্টিতে রাতযাপন করছে পরিবারটি।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের চরবগুলা গ্রামে গেলে দেখা যায় ঘরের সামনে শাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে বসে আছেন রিকশাচালকের স্ত্রী। তাদের দুটি বসতঘরে ঝুলছে তালা।

স্থানীয়রা জানান, একরাম হোসেন চরবগুলা গ্রামে সরকারি প্রকল্পের একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন। নিজের প্রয়োজনে তিনি একই এলাকার ছালামত উল্লার ছেলে তোফায়েল আহম্মদের কাছ থেকে মাসিক লাভের টাকা দেওয়ার চুক্তিতে কিছু টাকা নেন। রিকশাচালক একরাম দরিদ্রতার কারণে দীর্ঘদিন চুক্তি অনুযায়ী লাভের টাকা দিতে না পারায় তোফায়েল তার ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়। এতে তার পরিবার ঝড়বৃষ্টির মধ্যে খোলা বারান্দায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
একরাম হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে আমার রিকশার সঙ্গে রাস্তায় দুর্ঘটনায় দুজন লোক আহত হন। তাদের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি তোফায়েল থেকে লাভের ওপর ৬০ হাজার টাকা নিই। ২০১৯ সালে আরও ১১ হাজার নিই। ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমি মোট ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পরিশোধ করি। এ টাকা দিতে গিয়ে আমাকে কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে জীবন শেষ। ২০২৩ সাল থেকে আর সুদের টাকা টানতে পারছিলাম না।

তিনি আরও বলেন, এক পর্যায়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যাই। কিছুদিন পর বাড়িতে এলে তিনি কয়েকজন লোক দিয়ে তুলে নিয়ে মারধর করেন। জোরপূর্বক ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। আমি চট্টগ্রাম গিয়ে রিকশা চালিয়ে সামান্য যা কিছু উপার্জন করি বাড়িতে পাঠালে কোনোরকম সংসার চলে।

গত কয়েকদিন আগে মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হাতিয়ার বাইরে যায়। এই সুযোগে তোফায়েল ঘরের সব মালপত্র বের করে তালা মেরে দেয়। আমার স্ত্রী ফিরে এলে তার কাছে চাবির জন্য গেলে তিনি চাবি দেননি। আট দিন ঘরে তালা দেওয়ায় বারান্দায় অন্যের কাছ থেকে ধার নেওয়া একটি মশারি ও একটি বিছানা নিয়ে কোনোরকম রাতযাপন করছে। রান্নাবান্না বন্ধ, পাশের লোকজন সামান্য যা দেয়, তা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে।

একরাম হোসেনের স্ত্রী বলেন, ঘরে ঢুকতে না পেরে খোলা বারান্দায় ছোট বাচ্চাদের নিয়ে রাতযাপন করছি। বৃষ্টির কারণে বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে গেছে। আট দিন পর আজ পাশের ঘর থেকে পাতিল নিয়ে ভাত রান্না হয়েছে। এলাকার অনেকের কাছে গিয়েছি। কেউ আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ঘরের বাইরে অবস্থান করে রিকশাচালকের ছোট বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। টাকা-পয়সা নেই যে ওষুধ কিনে খাওয়াবে। টাকার জন্য ঘরে তালা মেরে লোকজনকে বের করে দেওয়া এক অমানবিক কাজ।

অভিযোগের বিষয়ে তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, সে আমার কাছ থেকে লাভের ওপরে টাকা নিয়েছে। টাকা না দিয়ে সে অনেক দিন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ঘরে তালা দিয়েছি। টাকা পরিশোধ করলে তালা খুলে দেব।

চরকিং ইউপি চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, সুদের পাওনা টাকার জন্য কারও বসতঘরে তালা দেওয়া আইনত অপরাধ। আমি চৌকিদার পাঠিয়ে তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Satkhira observer

Popular Post

অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হাজার হাজার যুবক : ঝুঁকছে ভয়ংকর অপরাধে

সুদ না দিতে পারায় ঘরে তালা: বারান্দায় রাত্রিযাপন রিকশাওয়ালার পরিবার

Update Time : 07:05 pm, Friday, 22 August 2025

নোয়াখালী হাতিয়ায় সুদের টাকার জন্য রিকশাচালক একরামের বসতঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে তোফায়েল আহম্মেদ নামে একজন। এতে আট দিন ধরে খোলা বারান্দায় সন্তানদের নিয়ে ঝড়বৃষ্টিতে রাতযাপন করছে পরিবারটি।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের চরবগুলা গ্রামে গেলে দেখা যায় ঘরের সামনে শাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে বসে আছেন রিকশাচালকের স্ত্রী। তাদের দুটি বসতঘরে ঝুলছে তালা।

স্থানীয়রা জানান, একরাম হোসেন চরবগুলা গ্রামে সরকারি প্রকল্পের একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন। নিজের প্রয়োজনে তিনি একই এলাকার ছালামত উল্লার ছেলে তোফায়েল আহম্মদের কাছ থেকে মাসিক লাভের টাকা দেওয়ার চুক্তিতে কিছু টাকা নেন। রিকশাচালক একরাম দরিদ্রতার কারণে দীর্ঘদিন চুক্তি অনুযায়ী লাভের টাকা দিতে না পারায় তোফায়েল তার ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়। এতে তার পরিবার ঝড়বৃষ্টির মধ্যে খোলা বারান্দায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
একরাম হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে আমার রিকশার সঙ্গে রাস্তায় দুর্ঘটনায় দুজন লোক আহত হন। তাদের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি তোফায়েল থেকে লাভের ওপর ৬০ হাজার টাকা নিই। ২০১৯ সালে আরও ১১ হাজার নিই। ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমি মোট ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পরিশোধ করি। এ টাকা দিতে গিয়ে আমাকে কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে জীবন শেষ। ২০২৩ সাল থেকে আর সুদের টাকা টানতে পারছিলাম না।

তিনি আরও বলেন, এক পর্যায়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যাই। কিছুদিন পর বাড়িতে এলে তিনি কয়েকজন লোক দিয়ে তুলে নিয়ে মারধর করেন। জোরপূর্বক ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। আমি চট্টগ্রাম গিয়ে রিকশা চালিয়ে সামান্য যা কিছু উপার্জন করি বাড়িতে পাঠালে কোনোরকম সংসার চলে।

গত কয়েকদিন আগে মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হাতিয়ার বাইরে যায়। এই সুযোগে তোফায়েল ঘরের সব মালপত্র বের করে তালা মেরে দেয়। আমার স্ত্রী ফিরে এলে তার কাছে চাবির জন্য গেলে তিনি চাবি দেননি। আট দিন ঘরে তালা দেওয়ায় বারান্দায় অন্যের কাছ থেকে ধার নেওয়া একটি মশারি ও একটি বিছানা নিয়ে কোনোরকম রাতযাপন করছে। রান্নাবান্না বন্ধ, পাশের লোকজন সামান্য যা দেয়, তা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে।

একরাম হোসেনের স্ত্রী বলেন, ঘরে ঢুকতে না পেরে খোলা বারান্দায় ছোট বাচ্চাদের নিয়ে রাতযাপন করছি। বৃষ্টির কারণে বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে গেছে। আট দিন পর আজ পাশের ঘর থেকে পাতিল নিয়ে ভাত রান্না হয়েছে। এলাকার অনেকের কাছে গিয়েছি। কেউ আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ঘরের বাইরে অবস্থান করে রিকশাচালকের ছোট বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। টাকা-পয়সা নেই যে ওষুধ কিনে খাওয়াবে। টাকার জন্য ঘরে তালা মেরে লোকজনকে বের করে দেওয়া এক অমানবিক কাজ।

অভিযোগের বিষয়ে তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, সে আমার কাছ থেকে লাভের ওপরে টাকা নিয়েছে। টাকা না দিয়ে সে অনেক দিন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ঘরে তালা দিয়েছি। টাকা পরিশোধ করলে তালা খুলে দেব।

চরকিং ইউপি চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, সুদের পাওনা টাকার জন্য কারও বসতঘরে তালা দেওয়া আইনত অপরাধ। আমি চৌকিদার পাঠিয়ে তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।