বিষ্ণুপুর প্রতিনিধি:
একসময় গ্রাম – বাংলার ঐতিহ্য ছিল হা-ডু-ডু খেলা।কালের বির্বতনে সময়ের প্রেক্ষাপটে সেই ঐতিহ্য আজ বিলীন হতে বসেছে । আধুনিকতার ছোঁয়া আর প্রযুক্তির কারসাজিতে মানুষ তার গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষমতা হারিয়েছে। কিন্তু গ্রাম বাংলার জীবন তো লাটি খেলা, হা-ডু-ডু খেলা সহ অনেক কিছু। এখন আর শোনা যায় না হা-ডু-ডু খেলার মাঠের চিৎকার- উল্লাস। একজন আরেকজনের খেলোয়াড়ের পা ধরে রেখেছে আরেকজন হা-ডু-ডু,হা-ডু-ডু বলে প্রতিপক্ষ প্লেয়ার কে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। প্রতিপক্ষকে ছুঁতে গেলে সবাই মিলে তাকে টেনে ধরে আকড়ে রাখছে সে খেলায় আউট হয়ে মাঠ ছাড়ছে । এই গ্রামীণ পরিবেশে সহজ সরল মানুষের সহজলভ্য খেলা আর মনভরে উচ্ছ্বাস আজ আর দেখা মেলে না।একসময় প্রতিটি গ্রামে মাঠে ঘাটে হা-ডু-ডু খেলার প্রচলন ছিল। গ্রামীণ কৃষক নতুন ধান ঘরে তুলে সেই ধান বিক্রি করে টাকা দিয়ে আনত সুঠম দেহের আকৃতির অধিকারী হা-ডু-ডু খেলোয়াড়। মানুষ ছুটে যেত সেইসব বীর- বাহাদুর দের দেখতে।
তার চিৎকার আর কথা যেন ছিল অন্যরকম।খেলার মাঠের পরিবেশ তাদের ছন্দ বচন ভঙ্গিতে উত্তাল করে রাখত। আবার বিজয়ীদের সেই সময়ের সাদা-কালো টেলিভিশন, টেপ রেকর্ডার, চায়না ফনিজ সাইকেল মেডেল দিত।
সেরা খেলোয়াড়দের টর্চ লাইট,ঘড়ি উপহার দিত।
এসব ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচলন।
১৯৭২ সালে হাডুডু খেলাকে কাবাডি নাম দেওয়া হয় এবং একে জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়।
হাডুডু খেলা ভারত ও পাকিস্তানে কাবাডি, নেপালে ডুডু, শ্রীলঙ্কায় গুডুগুডু, থাইলান্ডে থিকাব ও মালয়েশিয়ায় ছি গুডুগুডু নামে পরিচিত। এ খেলার উৎপত্তিস্থল ভারতের তামিলনাড়ু।
হাডুডু ১২.৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের আয়তাকার মাঠে খেলা হয়। প্রতিদলে ১২ জনে খেলোয়াড় থাকে।এটা বাংলাদেশের জাতীয় খেলা।
বন্দকাটি গ্রামের বাসিন্দা রুহুল কুদ্দুস পাড় বলেন, আমরা শৈশবে দেখতাম বিশাল মাটির স্তুপ করে হা-ডু-ডু খেলার কোট বানানো হত। আর মাইকিং করা হত খেলোয়াড় দের নাম সহ আমরা ভ্যানের পিছনে ছুটতাম। খেলা শুরুর আগে বিশাল বড় দেহের অধিকারী খেলোয়াড়রা গায়ে সরিষার তেল মাখতো।
কিন্তু এখন আর সেই হাডুডু খেলা দেখা যায় না। হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে।
আরেক বাসিন্দা ফজলো মোড়ল ও মহিত মোড়ল বলেন,হা-ডু-ডু খেলা হলে সেখানে যেতাম বন্ধুরা মিলে।
দেখতাম হাডুডুর জমজমাট মাঠ। নারী পুরুষ সবাই খেলা দেখতে আসছে। ছোট বাচ্চারা মায়ের কোলে খেলা দেখছে।দানব আকৃতির দেহ সব খেলোয়াড়দের। তাদের চোখ দেখলে আমরা ভয় পেতাম। আর ধমক দিলে তো আরও ভয় পেতাম এভাবে শৈশব কেটেছে। কিন্তু আজ আর সেই হাডুডু খেলা নেই।
মুকুন্দপুর গ্রামের নাসির মোড়ল বলেন, আমি নিজে হাডুডু খেলতাম তখন বিভিন্ন গ্রামের মোড়ল – মাতবর ভাড়া করে নিয়ে যেত। খাওয়া দাওয়া চলত খাসি জবাই করে। তখন এক মাতবার সাথে আরেক মাতবারের খেলা হত। বিজয়ী হওয়ার জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করত । লড়াই টা ছিল খেলায় অস্ত্রে নয়। কোন মারামারি হানাহানি গ্রামীন জীবনে ছিল না কিন্তু আজ সেটা হারিয়ে গেছে। সেই সব ঐতিহ্য আর নেই। আমরা আবারও দেখতে চায় সেই হাডুডু মাঠ ও খেলোয়াড়দের।সেই উল্লাস সেই উদ্দীপনা গ্রামীণ কৃষক – কৃষাণীদের এককাতারে দাড়িয়ে হাডুডু খেলা।