সিলেটের শাহ আরেফিন টিলা। ১৩৭ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই টিলা। আর এর বর্তমান অবস্থা হলো জায়গায় জায়গায় গর্ত। ১ বছরে এই টিলা এখন আর টিলা নেই। একরকম একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত বছরও আগস্টের প্রথম সপ্তাহেও প্রায় ৫০ ফুট উঁচু এ টিলায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিল ৭০০ বছরের ঐতিহাসিক ‘শাহ আরেফিন টিলা মাজার’। মাত্র ৪ মাসেই এখন তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শুধু এই টিলা থেকেই লুট হয়েছে শতকোটি টাকার পাথর।।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে রয়েছে ২০ জনের একটি সিন্ডিকেট। এ লুটপাট হয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সম্মিলিত অংশগ্রহণে।
৫ আগস্টের পর এর অন্যতম হোতা- উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল আহমদ বাবুল, ইসলমাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেবুল আহমদ, ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইসমাঈল মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হুঁশিয়ার আলী, ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ফয়জুর রহমান, জালিয়ারপাড় গ্রামের আব্দুর রসিদ, মাজারের সাবেক খাদেমের ছেলে মনির হোসেন, জামায়াত কর্মী ইয়াকুব আলী।
পাথর তুলে নয়, তা পরিবহন করে ক্রাশার মিলে পৌঁছে দেন ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, গাড়ি থেকে পাথর কিনে মিলে বিক্রি করেন তিনি। এতে ঘনফুটপ্রতি এক দুই টাকা লাভ হয় বলে জানান তিনি।
তবে আওয়ামী লীগের যারা পাথর লুটের সাথে জড়িত ছিল তারা এখন পলাতক। ক্ষমতায় থাকতে টিলা থেকে পাথর তোলায় তারাই ছিলেন সবচেয়ে এগিয়ে।
এই লুটপাট প্রশাসন কী ঠেকাবে? পুলিশের বিরুদ্ধেই পাথরবাহী ট্রাক আর ট্রাক্টরগুলো থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এমন একটি ভিডিও ফুটেজও আসে যমুনা টেলিভিশনের কাছে।
এখন প্রশ্ন হলো সাদাপাথর এলাকা থেকে দেড় কোটি ঘনফুট পাথর কারা লুট করেছে? যারা করেছে, তারা নদীপারের জায়গা দখল করে ভাড়া দিতো লুটের পাথর স্তূপ করে রাখার জন্য।
৫ আগস্টের পর উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত করা সভাপতি সাহাব উদ্দিন ছিলেন লাভের ক্ষেত্রে শীর্ষে। তারপরই যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ দুদু। এছাড়া পূর্ব পারের নেতৃত্ব জেলা যুবদলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, সদস্য গিয়াস মিয়া।
লুটপাটে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা কালাইরাগের দুলাল মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন। তারা এখন পলাতক।
পাথর লুটপাটের ঘটনায় সামনে আসে আরও ৫১ জনের নাম। যারা সবাই পাথর উত্তোলনের এ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে হুমায়ুন আহমেদ হুমন আর সাব্বিরের নামও। ভোলাগঞ্জের খেলার মাঠে পাওয়া গেলো হুমনকে। তার দাবি, বৈধভাবে পাথর উত্তোলনের আন্দোলন করছেন তিনি।
১ বছর চোখের সামনে এসব হলেও হাত পা গুটিয়ে রেখেছিল প্রশাসন। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের ফুটেজ এটি।